কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অন্তত হাজার কোটি টাকা মূল্যের অধিগ্রহণ করা জমি প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে।
এখনো অব্যাহত রয়েছে দখল প্রক্রিয়া। উচ্ছেদ-নোটিশকেও তোয়াক্কা করে না দখলবাজরা। জমির দাম বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়কের জমি দখলও। জনবল সংকটের পাশাপাশি নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী না থাকায় জমি রক্ষায় অসহায় সওজ কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরি সেতু থেকে থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত চকরিয়া পৌরশহরের ১ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কের জন্য ১৯৫৫ সালে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল ৩২.৫১ একর। সেই জমি থেকে ২০ একরের বেশি এখন বেদখলে রয়েছে। দখলবাজরা মূল্যবান এই জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলে দিব্যি ব্যবসার মাধ্যমে পকেট ভারী করছে নিজেদের। এই ১ কিলোমিটার সড়কের জমির মূল্য আকাশচুম্বী। প্রতি গণ্ডা জমির মূল্য কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা করে ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ একরের বেশি সড়কের জমি প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছে। এভাবে চকরিয়া ও পেকুয়ায় ১১টি সড়কের অধিগ্রহণ করা অন্তত হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া সড়ক উপ-বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম। তিনি জানান, চকরিয়া ও পেকুয়ায় সওজের তত্ত্বাবধানে ১১টি সড়ক রয়েছে। সওজের বিভিন্ন শাখা অফিসে যোগাযোগ করেও সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা ও বেদখল হওয়া মোট জমির পরিমাণ পাওয়া যায়নি।
তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালেও এলজিইডি থেকে কয়েকটি সড়ক সওজে ন্যস্ত হয়েছে। কিছু জমির বিএস রেকর্ড হয়েছে ব্যক্তির নামে। নতুন পুরাতন রেকর্ড সমন্বয় করা গেলে অধিগ্রহণের মোট পরিমাণ বলা যাবে। প্রকৌশলী মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর বরইতলী এলাকার জাতীয় মহাসড়কের বেদখল হওয়া বিপুল পরিমাণ জমি প্রভাবশালীদের খপ্পর থেকে উদ্ধার করলেও পরে দখলবাজরা পুনরায় ওই জমি নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
অনুরূপভাবে সড়কের স্টেশন এলাকায় জমি দখল করা ৫০ জন দখলবাজকে নোটিশ দেয়া হয়েছে গত ১ বছরে। তাদের বলা হয়েছে, অবৈধভাবে সড়কের জমিতে নির্মিত স্থাপনা সরিয়ে নিতে। এরপরও তারা নোটিশের আদেশ না মানায় মৌখিক ও লিখিতভাবে দখল নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
সওজ’র চকরিয়া উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাহাত আলম বলেন, ‘আমি মাত্র ৬ মাস আগে এখানে যোগদান করেছি। সড়ক নির্মাণসহ অফিসিয়াল নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে। অধিগ্রহণ ও বেদখল জমির পরিমাণ সহসাই হিসেব করে জানানো যাবে।’
তিনি বলেন, ‘অতি প্রভাবশালীরা সড়কের জমি দখলে নামলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। নোটিশ প্রদান ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জবরদখলের তথ্য অবহিত করে থাকি।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রেলওয়ের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী রয়েছে। আমাদের কোন সশস্ত্র বাহিনী নেই। তাই জমি বেদখল ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে।
এরপরও অতিসম্প্রতি চকরিয়া পৌরশহরে জবরদখলকৃত একটি জমির ফটক ও ঘেরা গুঁড়িয়ে দিয়ে উদ্ধার চেষ্টা চালায়। দখলবাজরা এতোই শক্তিশালী যে, প্রকাশ্যে আমাদের উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা ও হুমকি দিয়েছে। উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পরই ফের ঘেরা বেড়া দিয়ে দখল করে নিয়েছে তারা।’
সওজ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহে আরেফীন বলেন, ‘নানা জটিলতায় অধিগ্রহণ ও বেদখলের জমির সঠিক পরিমাণ এখন বলা যাচ্ছে না।’
ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আরএস রেকর্ডমূলে সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কোন না কোন দপ্তরের ভুলে সড়কের বিপুল জমি ব্যক্তির নামে বিএস রেকর্ড হয়েছে। এমন তথ্য উদঘাটন করে চকরিয়া-পেকুয়ার রেকর্ড সংশোধন করতে গত ২ মাসে ৫৩টি মিস মামলা দায়ের করেছি। ওই মামলার রায় হওয়ার পর অধিগ্রহণ ও বেদখল জমির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।’
Leave a Reply