বিশেষ প্রতিবেদক
পেট্রোল স্প্রে ও গেইটে তালা লাগিয়ে সংবাদকর্মী আসিফ বাপ্পির বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ৩ দিন পরও গ্রেফতার হয়নি ঘটনার মূলহোতা মোহাম্মদ শাকিল। ওই ঘটনায় সেই শাকিল ও তার বাবা মোহাম্মদ মামুনসহ ৭ জনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা রুজু হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে অপহরণসহ একাধিক মামলার আসামি মোহাম্মদ শাকিল ও অন্য আসামিরা। পুলিশ একের পর এক অভিযান চালিয়েও তাদের কাউকে ধরতে পারছে না।
নিজের বোনের ইজ্জত রক্ষায় ‘ইভটিজার’কে বাধা দেয়ায় সংবাদকর্মী আসিফ বাপ্পি ও তার পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল তারা। গত ১৯ জুন গভীর রাতে ঘরের গেইটে তালা লাগিয়ে দিয়ে পুরো বাড়িতে পেট্রোল স্প্রে করে আগুন লাগিয়ে দেয় মামলার আসামিরা। ওই আগুনে দুইতলা পুরো বাড়ি পুড়ে গেলেও এলাকাবাসি ও ফায়ার ব্রিগেডের প্রচেষ্টায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন সংবাদকর্মী আসিফ বাপ্পি ও তার পরিবারের দুই বছর বয়সী শিশুসহ ৪ জন।
ওইদিন রাত আড়াইটার দিকে কক্সবাজার শহরের ২নং ওয়ার্ডের অধীন ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার শিকার আসিফ বাপ্পি ওই এলাকার নজির আহমদের ছেলে ও কক্সবাজার থেকে প্রচারিত অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজ চ্যানেল ‘ডিএনএন’ এর সংবাদ বিভাগের সমন্বয়কারি।
আসিফ বাপ্পি বলেন, আমরা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। দীর্ঘ প্রায় দেড়ঘন্টা পর এলাকাবাসি ও ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা দু’তলার জানালা ভেঙ্গে আমাদের উদ্ধার না করলে আমার দুই বছরের ভাতিজীসহ ঘরে থাকা চারজনই মারা যেতাম।
তার দাবি, পাশর্^বর্তী এলাকা নতুন বাহারছড়ার মোহাম্মদ মামুনের ছেলে মোহাম্মদ শাকিল নামের এক বখাটে দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে তার কলেজপড়ুয়া ছোট বোন সানজানা আহমেদ সাইবা’কে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। একবার তাকে অপহরণও করেছিল। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ, মামলাও হয়েছিল। কিন্তু সামাজিক ভাবে সালিশ করে ওই বখাটেকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল এই শর্তে যে, সে কখনও তার বোনকে উত্ত্যক্ত করবে না। কিন্তু বারবারই সে উত্ত্যক্ত করে আসছিল।
তাদের অভিযোগ, শাকিল নামের ওই বখাটে সানজানা আহমেদ সাইবা’র পিছু ছাড়েনি। প্রতিনিয়তই সে তাকে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিল। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাদের ঘর জ¦ালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ওই হুমকি দেয়ার কয়েকদিনের মাথায় ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে গত ১৯ জুন অগ্নিসংযোগ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ঘটনার মূলহোতা মোহাম্মদ শাকিলকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড হয়েছে। আসিফ বাপ্পির মা মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলা রেকর্ডের পর উপ-পরিদর্শক ওবাইদুল হককে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই ওবাইদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। দ্রুত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
অপরদিকে পুরো বাড়িটি পুড়ে যাওয়ায় সংবাদকর্মী আসিফ বাপ্পি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। পোড়া বাড়িটি এখনও সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। পরিবারের সদস্যরা এখনও আতঙ্গের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
আসিফ বাপ্পি জানান, তার পরিবারের সদস্যরা এখন অন্যের বাড়িতে অবস্থান করছেন। অগ্নিসংযোগকারি মোহাম্মদ শাকিল ও তার সহযোগীরা এখনও তাদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে। আবারও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকায় তারা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না।
আসিফ বাপ্পির পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার মূলহোতা মোহাম্মদ শাকিলসহ অন্যদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply