1. coxsbazarshomachar@gmail.com : admin :

‘আয়নাঘরে’ নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ

  • পোস্টিং সময় : মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক ::

‘আয়নাঘরে’ নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। রবিবার তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টা-১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে এবং অস্ত্রধারীরা মিলে উত্তরার একটি বাসা থেকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে একটি গোপন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। জায়গাটি ছিল কবরের মতো, একটি কামরা। আমার মনে হয়েছিল এটি কোনো বাড়ির নিচতলা হবে। কামরাটির আয়তন হবে পাঁচ ফিট বাই ১০ ফিট। টয়লেটের জন্য জায়গাটাতে কোনো রকম একটা ব্যবস্থা ছিল। আমাকে লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেয়া হতো।

তিনি বলেন, কামরাটির বাইরে একটি স্ট্যান্ড ফ্যান চালু থাকত এবং ছাদের সঙ্গে হাই পাওয়ার লাইট ছিল। এ ঘরটিতে আমাকে প্রায় ৬১ দিন রাখা হয়। এসময়ে একদিনের জন্যও বের করা হয়নি। সেখানকার অন্যান্য বিষয়ে আমি বলতে চাই না। কারণ যারা এসব করেছে তারা তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের ইশারায় করেছে। আমি মনে করি এসব কাজের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে কোথাও না কোথাও তাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, যেদিন আমাকে নিয়ে আসে সেদিন দুপুরে একইভাবে চোখে কালো কাপড় বেঁধে আনুমানিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘোরানো হয়। থামার পর আমার মনে হলো যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চোখে দেখতে না পারায় ঠিক বুঝতে পারিনি। সেখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করল তারা। হয়তো তারা রাতের অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা করছিল। এরপর কিছুদূর হাঁটিয়ে আবার কিছুদূর গাড়িতে করে একটা জায়গায় এনে আমাকে তোলা হয়। আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে সেটা সীমান্তের কাছাকাছি কোনো জায়গা হবে। সেখানেও কিছু সময় অপেক্ষা করা হয়।

তিনি বলেন, এতসবের পর সেখান থেকে একটি গাড়িতে করে আমাকে শিলংয়ে একটি মাটির ঘরে ফেলা হয়। পরে জানতে পারি জায়গাটির নাম গলফ লিংক। তখনও সূর্য ওঠেনি। অর্থাৎ তখনও সকাল হওয়ার বাকি ছিল। এরপর আমি পরিচয় দিয়ে সকালে ভ্রমণকারীদের কাছে পুলিশে খবর দেয়ার অনুরোধ জানাই। এরপর পুলিশ এসে আমাকে হেফাজতে নেয়। এসময়ে আমাকে ঠিকঠাক মেডিসিন সাপ্লাই দেয়া হয়েছে। ভালো পানি ও তিনবেলা খাবার দিয়েছে। এর বেশি তাদের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।

এর আগে রবিবার (১১ আগস্ট) দুপুর সোয়া ২টায় দীর্ঘ ৯ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফিরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।  আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন। তখন তিনি যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ওই বছরের ১১ মে মেঘালয়ের শিলংয়ের পুলিশ উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় সালাহ উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ভারতে প্রবেশ করলেও তার কোনো বৈধ কাগজপত্র সেসময় মেঘালয় পুলিশ না পাওয়ায় ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। সেই মামলায় ২০১৫ সালের ২২ জুলাই শিলংয়ের আদালতে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়।

মেঘালয় পুলিশের করা ওই মামলায় ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর খালাস পান সালাহ উদ্দিন। পরে সেই রায়ের বিরুদ্ধে ভারত সরকার আপিল করে। ওই আপিল নিষ্পত্তি করে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলং জজ কোর্ট তাকে খালাস দেয়। দ্রুত যেন তাকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়, সেই নির্দেশনা দেয় আদালত। পাসপোর্ট না থাকায় সালাহ উদ্দিন আহমেদ দেশে ফিরেছেন ট্র্যাভেল পাস (ট্রাভেল পারমিট) নিয়ে। তিনি এই পারমিটের জন্য গৌহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আবেদন করেছিলেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালাহ উদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরার পথ সুগম হয়। আইনি জটিলতা কাটিয়ে এবার তিনি নিজ দেশে ফিরলেন।

সালাহ উদ্দিন বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন তিনি। পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে নামেন। ২০০১ সালে তিনি কক্সবাজার থেকে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, পরে চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদও সংসদ সদস্য ছিলেন। ভারতে আটকের সময়ে সালাহ উদ্দিন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ কক্সবাজার সমাচার
Site Customized By NewsTech.Com
error: Content is protected !!