তারেক আল মুনতাছির :: বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে সদ্যসমাপ্ত একটি আনন্দভ্রমণ যেন হয়ে উঠেছিল লেখকদের জন্য এক পরিপূর্ণ প্রশান্তির আয়োজন। দেশের সাতটি জেলার সদস্যদের নিয়ে এমন একটি বৃহৎ পরিসরের ভ্রমণ আয়োজন নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ। কিন্তু যাদের একাগ্রতা, সুপরিকল্পনা ও নিষ্ঠার ফলে এই স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেয়েছে, তাদের প্রতি সবার অন্তরের কৃতজ্ঞতা।
এই আয়োজনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন অত্র সংগঠনের সভাপতি রায়হান ভাই, সাধারণ সম্পাদক তানজিদ ভাইসহ সংশ্লিষ্ট টিম লিডাররা। তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এমন নিখুঁত আয়োজন সম্ভব হতো না। পাশাপাশি উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি আজহার ভাই ও উপদেষ্টা জাবেদ ভাইয়ের অবদানও স্মরণীয়, যাদের সক্রিয় সহযোগিতায় বহু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
ভ্রমণের সবচেয়ে মূল্যবান দিক ছিল অনলাইনে পরিচিত মুখগুলোকে সরাসরি সামনে দেখা, হাত মেলানো, গল্পে মেতে ওঠা। যাদের সঙ্গে এতদিন লেখনী কিংবা মেসেন্জারে মাধ্যমে পরিচয়, তাদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো ছিল সত্যিই হৃদয়ছোঁয়া অভিজ্ঞতা। এমন বন্ধন তৈরি হয়েছে, যেটি দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুইটি মনোরম স্থানে ঘোরার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনটি চন্দ্রনাথ পাহাড় ও গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতের প্রতিটি ধাপে ধাপে যেন ছিল একেকটি গল্প, একেকটি অনুভব। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা, কিন্তু চূড়ায় পৌঁছানোর পর প্রকৃতির অপার রূপ দেখে সব ক্লান্তি মিলিয়ে যায়। সেখান থেকে দেখা যায় সীতাকুণ্ডের সবুজ বিস্তার আর আকাশের গায়ে রঙ ছড়ানো সূর্য।
প্রায় ১২০০ ফুট উচ্চতার চন্দ্রনাথ পাহাড় শুধু প্রাকৃতিক নয়, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বেও অনন্য। চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির হাজারো তীর্থযাত্রীর এক গন্তব্য। পাহাড়জয়ের সময় প্রতিটি সদস্য ছিলেন যেন একেকজন নির্ভীক অভিযাত্রী দলে দলে, কেউবা একা, হাতে লাঠি, মনে সাহস, মুখে হাসি নিয়ে অগ্রসর হয়েছেন চূড়ার দিকে। পথের দোকানগুলোতেও মিলেছে বিরল এক অভিজ্ঞতা, যেখানে ঠান্ডা শরবত, তরমুজ, জুস ইত্যাদি ছিল পাহাড়ের মাঝখানে স্বর্গের স্বাদ।
সন্ধ্যার দিকে রওনার সময় গাড়িতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় নতুন মাত্রা যোগ করে। গান করেন রাকিব ভাই, লাইজু আপু,মুজিব ভাই, আজহার ভাই, মালিহা আপুসহ আরও অনেকেই। তবে রায়হান ভাইয়ের প্রাণখোলা গান যেন সবচেয়ে বেশি প্রশংসা কুড়ায়, অংশগ্রহণকারীদের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কেটে যায়।
আনন্দের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চার সুযোগও ছিল। আয়োজিত হয় একটি কুইজ প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মেধা ও জানার পরিধি তুলে ধরেন। বিজয়ী হন আজহার মাহমুদ,ছাবিহা জামান ইশপা, মিজনুর রহমান ও এসএম রায়হান উদ্দিন। আনন্দের মাঝেও শিখতে পারার এই সুযোগ ছিল এক বিশেষ সংযোজন।
সবকিছু মিলিয়ে এই আনন্দভ্রমণ ছিল শুধুমাত্র একটি সফর নয় এটি ছিল এক অনুভব, এক আবিষ্কার, এক হৃদয়ের সংযোগ। বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার যে সেতুবন্ধন এখানে গড়ে উঠেছে, তা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মকাণ্ডে নতুন গতি ও অনুপ্রেরণা যোগাবে। এই দিনটি থেকে পাওয়া স্মৃতিগুলো আমাদের মনে থাকবে, হৃদয়ের এক আলাদা ক্যানভাসে রঙ ছড়িয়ে যাবে চিরকাল।
Leave a Reply