চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ।।
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার শেষ সময় চলছে। চলতি অমাবস্যা তিথি বা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময়ে ডিম না ছাড়লে চলতি মৌসুমে আর সম্ভাবনা না থাকায় ডিম আহরণকারীদের মাঝে চাপা উত্তেজনা কাজ করছে।
মূলত: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পর্যাপ্ত বজ্র-বৃষ্টি না হওয়ায় ও নদীতে পাহাড়ী ঢল না নামায় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছেনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে
অমাবস্যা তিথি বা জো। এটি চলবে আগামী ২০ জুন পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টদের মতে, অমাবস্যা তিথিতে ডিম না ছাড়লে চলতি বছর আর সম্ভাবনা নেই।
তবে আশার আলো দেখিয়ে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে সামান্য পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা মাছ।
এর আগে হালদা গবেষক ও ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছিলেন, এই অমাবস্যার জোতে যদি মা মাছ ডিম না ছাড়ে তাহলে এ বছর আর ডিম ছাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।
তবে গতকাল সকালে হালকা বজ্রসহ বৃষ্টির পর রাতে অল্প করে হলেও ডিম ছাড়ার আভাস মেলায় আশান্বিত হয়েছেন সংগ্রহকারীরা।
জানা যায়, রাতে নদীর গড়দুয়ারা নয়াহাট, সিপাহিরঘাট, মাছুয়াঘোনা, আজিমারঘাটসহ কিছু কিছু স্থানে সামান্য পরিমাণ ডিম ছাড়ার আলামত দেখা যায়। যদি রাতের মধ্যে বৃষ্টিপাত হয় তাহলে হয়তো মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিম আহরণকারী কয়েকজন জানান, নদীর কোনো কোনো স্থানে নগণ্য পরিমাণ ডিমের আলামত দেখা যাচ্ছে। যা সন্তোষজনক নয়। মধ্যম মাদার্শার আশু বড়ুয়া জানান, তিনি রাতে নদীর আজিমার ঘাট এলাকায় রয়েছেন। সেখানে দুই একটি ডিমের আলামত দেখা যাচ্ছে। রাতের মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে ডিম ছাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা নদীতে রাতে ডিমের যে নমুনার কথা বলা হচ্ছে তাকে নমুনা ডিম বলা যাবে না। এখন নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। যদি বৃষ্টিপাত হয় হয়তো রাত দুইটা আড়াইটার দিকে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীতে মাছের ডিম ছাড়ার পাঁচটি জো/তিথি এর মধ্যে চলে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় ডিম আহরণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা নদী পাড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হলে ডিম আহরণকারী আশায় বুক বাধলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেলে সে আশা হতাশায় পর্যবসিত হয়। অবশ্য আরো কয়েক দিন জো চলবে। এই প্রত্যাশায় তারা অপেক্ষায় রয়েছে। এই জো ডিম ছাড়ার শেষ ভরসা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম জানান, হালদা নদী মিঠা পানির মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল, এবং কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র।
এখানে এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রজননের মৌসুমে এখনো পুরোদমে দেখা মেলেনি মা মাছের বহুল কাঙ্ক্ষিত ডিমের। ইতোমধ্যে পরপর পাঁচটি জো (ডিম ছাড়ার সময়) অতিক্রম হলেও খুবই সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিম পাওয়া গিয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং প্রজননের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারসমূহ অনুকূলে না আসায় থাকায় পুরোদমে ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ।
উল্লেখ্য, বিগত চতুর্থ জো অর্থাৎ মে মাসের অমাবস্যার জো ও চলতি মাসের অমাবস্যার জোয়ের আগে ১১ জুন হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং স্থানে খুবই সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। কিন্তু ওই সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না নেমে আসায় পুরোদমে ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ।
বৃহস্পতিবার)থেকে শুরু হয়েছে কার্প জাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার ষষ্ঠ জো অর্থাৎ অমাবস্যার জো যা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে। এই সময় বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নেমে আসলে এবং অনূকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলে পুরোদমে ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ।
Leave a Reply