নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গভীর রাতে পুলিশের পরিচয়ে দরজা খুলতে বাধ্য করার পর বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পাঁচ নারীকে গুরুতর জখম করে। তন্মধ্যে ৩ সন্তানের জননী এক নারীকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, অপহৃত নারী একটি হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী এবং তার দেড় বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে।
এমনকি হত্যা মামলার স্বাক্ষী আবদুল মালেকের স্ত্রী আয়েশা আক্তার (৩০) কে আহত করে জোরপূর্বক টেনে-হিঁচড়ে বের করার পর অপহরণ করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌণে একটার দিকে উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের গুরুইন্যা কাটা গ্রামের আবদুল মালেকের বসত বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। অপহরণের পর ইতোমধ্যে ২৪ ঘন্টা পার হলেও ওই নারীর হদিস মিলেনি। তবে থানা পুলিশ তাকে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আক্রান্ত ওই বাড়ির গৃহকত্রী আয়েশা আক্তার ইতোপূর্বে তার শ্বশুর আবদুল করিমকে হত্যার ঘটনায় থানায় রুজু হওয়া মামলার অন্যতম স্বাক্ষী ছিলেন। এজন্য তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার পর অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
হামলায় আহতরা হলেন- আবদুল মালেকের স্ত্রী অপহৃত আয়েশা আক্তার (৩০), আলী আহমদের স্ত্রী নুরুজা বেগম (৪০), রিদুয়ানের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৩৫), আলী আহমদের কন্যা ফারজানা ইয়াছমিন (১৯) ও আবদুল মালেকের কন্যা আয়েশা ছিদ্দিকা (১৮)। তন্মধ্যে অপহৃত আয়েশা আক্তার ছাড়া বাকীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী আলী আহমদের স্ত্রী নুরুজা বেগম বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার থানায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এজাহারে ঘটনায় জড়িত হিসেবে নামোল্লেখ করা হয় যথাক্রমে আমির হোসেন, শহিদুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, তোহা, নুরুল আবচার, নেজাম উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন, রিয়াজ উদ্দিন ও রুবেলসহ ৯ জনের। বাকীদের অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই ঘটনার খবর পেয়ে থানার টহলরত একদল পুলিশ আক্রান্ত বসত বাড়ি পরিদর্শন করেন। এরপর শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এ এম রকীব উর রাজা ও চকরিয়া থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া। থানায় লিখিত এজাহার দেওয়ার পর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দলটি বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান অপহৃত নারী আয়েশা আক্তারকে উদ্ধারে।
বাদী নুরুজা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেন- চলতি বছরের পহেলা মে তাঁর শ্বশুর আবদুল করিমকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন তাঁর (বাদী) স্বামী আলী আহমদ। হত্যা মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তারা প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নিতে এবং স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য না দিতে হুমকিসহ নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এই কারণে হত্যা মামলার বাদী আলী আহমদ এলাকা ছাড়া এবং দেবর অন্য একটি ঘটনায় মামলায় বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে। এই সুযোগে হত্যা মামলার আসামী ও সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে উপরোক্ত ঘটনা সংঘটিত করে। এ সময় বাড়িতে থাকা নারীদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমসহ নগদ ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা, এক ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। এমনকি দেড় বছরের শিশু রেখে দেবর আবদুল মালেকের স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বলেন- ‘থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেওয়া হয়। পাশাপাশি হত্যা মামলার স্বাক্ষী নারী আয়েশা আক্তারকে উদ্বারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। তবে এখনও পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা যায়নি।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন- ‘আক্রান্ত পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত এজাহার পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তের পর এজাহারটি মামলা হিসেবে রুজু করা হবে। একইসাথে অপহৃতাকে উদ্ধারে পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ।’ ##
Leave a Reply