1. coxsbazarshomachar@gmail.com : admin :
সদ্য পাওয়াঃ

লামার ইয়াংছা ব্রীজ নির্মাণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত

  • পোস্টিং সময় : বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

মোঃ নাজমুল হুদা, লামাঃ বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ইয়াংছা খালের উপর ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ১০.২৫ মিটার প্রস্থ্য ইয়াংছা ব্রীজ নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে ঘটেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। বছরের পর বছর যাতায়াতের সীমাহীন কষ্ট, সময়ের অপচয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির অবসান ঘটিয়ে এখন এই ব্রিজটি হয়ে উঠেছে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাইলফলক।

লামা-আলীকদম- চকরিয়া- চিরিংগা, সুরাজপুর -মানিকপুরসহ , ফাসিঁয়াখালী ইউনিয়নের অন্তত ৬০ গ্রামের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল এই ব্রিজটি। পারাপারে প্রতিদিনের ভোগান্তি, রোগী পরিবহনে দেরি,অল্প বোঝাই নিয়ে যান চলাচল, ব্যবসায়ী ও কৃষকের আর্থিক, সামাজিক যোগাযোগ উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের কষ্টের যাত্রা—সবই এখন অতীত । শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা না করে সরাসরি গাড়িতে চড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারছে। এই পরিবর্তন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব।

ইয়াংছা ব্রীজ চালু হওয়ার পর এলাকাবাসী এখন সহজেই কম সময়ে লামা,আলীকদম, বান্দরবাব,কক্সবাজার,চট্টগ্রামসহ ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ সড়কে সহজে এলাকায় যাতায়াত করতে পারছে। ফলে ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক—সব শ্রেণির মানুষের সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হচ্ছে। যানবাহনের সহজ গম্যতার কারণে কৃষকেরা দ্রুত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে এবং ভালো দাম পাচ্ছে। জেলেরা স্বল্প খরচে মাছ বাজারে আনতে পারছে, যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।

ইয়াংছা ব্রিজের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে ব্যবসায়ি,শিক্ষার্থী ও রোগীরা। আগে শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসায় যেতে যেতে অনেক সময় লাগত। এখন তারা গাড়িতে করেই সরাসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে। রোগীরাও দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে উন্নত চিকিতসা গ্রহণ করতে পারছে। এলাকার ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা সহজে পণ্য শহরে বা উপজেলার বাইরে পাঠাতে পারায় ব্যবসা ও কৃষিকাজে গতি এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র তথ্য মতে, বান্দরবানের জেলার উপজেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের ইয়াংছা – লামা আলীকদম -চিরিংগা ১১ তম পিসি ব্রীজ ১০ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ২০২৩ সালের আগষ্ট মাসে শুরু হয়ে ২০২৫ আগষ্টে শেষ হয়। রিমি নির্নাণ লিঃ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করেন। উভয় পাড়ের এপ্রোচ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২৫ সালে সালের ৩০ মে মধ্যে ব্রিজটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

ব্রীজটি চালু হওয়ার পর শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, সমগ্র এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র বদলে গেছে। জমির দাম বেড়েছে, কৃষিপণ্য ও মাছ দ্রুত বাজারজাত হওয়ায় লাভ বেড়েছে, এবং বেকারত্ব কমেছে। স্কুল-কলেজে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, চিকিৎসা গ্রহণের হার বেড়েছে, ফলে সামাজিক উন্নয়নও ঘটছে।

লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোঃ ইসমাইল, জিয়াউল হক, স্থানীয় কৃষক রিমন,হাবিবুল্লাহ,চালক আব্দুর রহনান,কালো ড্রাইভারসহ অনেকেই জানিয়েছেন, আগে ইয়াংছা খালের দুই পারে থাকা অনেক গ্রামের মানুষের যাতায়াতে সীমাহীন হয়রানি হতো। ব্রিজটির কারণে এখন এই এলাকার মানুষ গ্রামে থেকেও শহরের মতো সুবিধা পাচ্ছে। এটি শুধু আর্থিক নয়, দৃষ্টিনন্দন,মানসিক শান্তিও দিয়েছে।

ইয়াংছা খালের উপর ব্রিজ নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে, ঝরে পড়ার হার কমেছে। আগে দীর্ঘ যাত্রা ও কষ্টের কারণে অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিত, এখন সেই সমস্যা নেই। ফলে এলাকার মানবসম্পদ উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই ব্রিজটি।

স্থানীয় আরাকান শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া ভূট্টু ও শ্রমিক নেতা জাফর আলম বলেন, লামার ইয়াংছা খালের ব্রিজ কেবল একখণ্ড কংক্রিটের সেতু নয়, এটি এই এলাকার মানুষের আশা, স্বপ্ন ও উন্নয়নের প্রতীক। এলাকার মানুষ এখন দ্রুত যাতায়াত, সময় ও অর্থের সাশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং উন্নত ব্যবসায়িক সুযোগ পাচ্ছে।

সওজের উপ সহকারি প্রকৌশলী তুহিন চাকমা বলেন, নতুন রাস্তা বা ব্রিজ এলাকার মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ইয়াংছা ব্রিজও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি পরিবর্তন এসেছে, যা আর্থিক, সামাজিক ও মানবিক—সবদিক থেকেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ কক্সবাজার সমাচার
Site Customized By NewsTech.Com
error: Content is protected !!