অনলাইন ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে কোটা বাতিল করা না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রোববার তৃতীয় দিনের মতো কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা এ ঘোষণা দেন।
বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে একত্রিত হয়ে মিছিল নিয়ে কলাভবন, প্রশাসনিক ভবন, উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রবেশপথ ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। তারপর সেখানে ‘বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি’ পালন করেন।
এ সময় তারা ‘দেশ নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘মেধাবীরা মুক্তি পাক, কোটা নিপাত যাক’ প্রভৃতি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। সমাবেশ শেষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, দীর্ঘসময় কোটা বৈষম্য বহাল ছিল। শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে আন্দোলনের মাধ্যমে তা থেকে ছাত্রসমাজকে মুক্ত করেছিল। আদালতের বৈষম্যমূলক রায় শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।
সমাবেশে শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি কোটার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দেখলাম। তিনি শিক্ষার্থীদের মন্ত্রী নন। যারা কোটার পক্ষে তাদের উদ্দেশে বলছি, নিজেদের অক্ষমতা ঢাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করবেন না।’
আরেক ছাত্রী তামান্না আক্তার বলেন, ‘মেধাবীদের পিষ্ট করা হচ্ছে। আমি নারী হয়ে বলছি, আমার কোনো কোটার প্রয়োজন নেই।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফায়েজ বলেন, ছাত্রসমাজ মেধার ভিত্তিতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল। ২০২৪ সালে আমাদের সে স্বপ্ন ধূলিসাৎ করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা হাইকোর্টের রায় মানি না।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম সোহান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা সাম্য নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। এই বাংলাদেশে আবার কোটা কেন? কোটা প্রার্থীদের মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ বলেন, আমাদের সংবিধানে সুযোগের সমতার কথা বলা হয়েছে। তা নিশ্চিত করতে হবে। আপনারা মেধাবীদের হাতে দেশ তুলে দিন। অধিকার আদায় না করে আমরা ফিরব না।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, পুরো কোটা বাতিল না করে কেবল নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের কোটা বাতিল করেছিল। এটা আজকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এখন থেকে এসব গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের সন্তানদের নিয়োগে আর কোনো বাধা নেই।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান। তিনি জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সরকার। এমন পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী।
২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার রায়ে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ রোববার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ সাইফুল আলম।
Leave a Reply