1. coxsbazarshomachar@gmail.com : admin :
সদ্য পাওয়াঃ
বসুন্ধরা গ্রুপের বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দের আদেশ এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয়: আসিফ নজরুল তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস আলীকদমে বিএনপির সচেতনতামূলক সমাবেশ অনুষ্ঠিত চকরিয়ায় পুলিশ সেজে ডাকাতি করা ৫২টি ব্যাটারী উদ্ধারঃ গাড়ী জব্দ, আটক-১ চকরিয়ায় গভীর রাতে পুলিশ পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে লুটপাট, হামলায় পাঁচ নারী আহত, অপহৃত এক গৃহবধূ ভারতের দ্বিচারিতা ‘নিন্দনীয় ও আপত্তিকর’: আসিফ নজরুল চকরিয়ায় নারী উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় ভিন্নধর্মী ব্যবসা কেন্দ্র “নিত্যদিনের বাজার” ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ: সংখ্যালঘুরা ‘আগের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে’ চকরিয়ায় পুলিশ সেজে টমটম গ্যারেজে ডাকাতিঃ আহত-১

বজ্রপাত রোধের সব প্রকল্প আকাশকুসুম

  • পোস্টিং সময় : রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

চলতি বছর সারা দেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। অন্তত গত দশ বছরে বজ্রপাতে এ মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমানুপাতিক হারে বাড়ছে। ২০১৬ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সরকার। এরপর এ দুর্যোগ ঠেকাতে উঠেপড়ে লাগে কয়েকটি মন্ত্রণালয়। নেওয়া হয় একের পর এক প্রকল্প। কিছুদিন পর সেই প্রকল্প ব্যর্থ হলে ফের নেওয়া হয় নতুন প্রকল্প। এভাবে প্রকল্প নেওয়া আর ব্যর্থতার মধ্যে কিছু মানুষের আর্থিক ভাগ্যের পরিবর্তনও ঘটে। এদিকে নিত্যনতুন প্রকল্পের ভিড়ে গচ্চা যাচ্ছে শত শত কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চতর গবেষণা এবং দেশের বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্প হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি কেবল বড় প্রকল্পের দিকে না ঝুঁকে সচেতনতা বৃদ্ধির দিকেও নজর বাড়াতে হবে।

 

 

বজ্রপাত ঠেকাতে ২০১৭ সালে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে তালগাছ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘বজ্রপাত ঠেকাতে তালগাছই ভরসা’ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয় তালগাছ লাগানোর বৃহৎ প্রকল্প। সরকারের তরফ থেকে সারা দেশে কোটি তালের চারা রোপণের পরিকল্পনা জানানো হয়। ৩৫ লাখ তালের আঁটি ও ১০ লাখ তালগাছ রোপণের সেই পরিকল্পনায় কিছু অংশ বাস্তবায়নের পর কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, তালগাছের মাধ্যমে বজ্রপাত ঠেকানো যাবে না। তবে ততদিনে গচ্চা গেছে শতকোটি টাকা। এ প্রকল্পের অধীনে কিছু এলাকায় স্বল্পসংখ্যক তালগাছ লাগানো হলেও সেই চারার চিহ্নমাত্র নেই। আর আঁটি থেকে চারা জন্মানো তো দূরের কথা, আঁটিরও হদিস নেই। পরে গত বছরের মে মাসে তালগাছ প্রকল্প বাতিলের কথা জানান স্বয়ং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি ওই সময় বলেন, ৩৮ লাখের মতো তালগাছ লাগানোর পর দেখা গেল, যত্নের অভাবে সেগুলো মারা যাচ্ছে। তাই এটি বাতিল করে দিয়েছি। আর একটি তালগাছ বড় হতে ৩০ থেকে ৪০ বছর সময় লাগে। তাই এটি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান মনে হচ্ছে না।

 

 

এ তো গেল কেবল একটি প্রকল্পের কথা। এরপর ক্রমান্বয়ে বজ্রপাত ঠেকাতে নেওয়া হয় আরও নানা উদ্যোগ এবং প্রকল্প। প্রতিবছর ঝড়বৃষ্টির সময়ে কর্তৃপক্ষের নতুন প্রকল্প নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়। এরপর আবার থমকে যায় অনেক উদ্যোগ। এমনই আরেকটি ব্যর্থ উদ্যোগ লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো।

 

 

বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানতে ২০১৭ সালে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ উদ্যোগ নেয়। ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের আট স্থানে বসানো হয় সেই যন্ত্র। তবে সেই প্রকল্পও সাফল্যের মুখ দেখেনি। টাকা গচ্চা যাওয়ার পর বের হয়েছে নানা সমস্যা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা এবং পটুয়াখালীতে রাডার স্থাপনের পর বলা হয়েছিল, ১৫ মিনিট আগেই ওই এলাকার মানুষকে বজ্রপাতের তথ্য জানিয়ে দেওয়া যাবে। কারিগরি দক্ষতার অভাবে রাডারগুলো এখন আর কোনো কাজে আসছে না। দক্ষ জনবলও নেই। যে এজেন্টের মাধ্যমে এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল, তারও হদিস মিলছে না।

 

 

একের পর এক প্রকল্প ব্যর্থ এবং লুটপাটের পর গত বছর বজ্রপাত ঠেকাতে নেওয়া হয় আরেকটি নতুন প্রকল্প। এবার বলা হয়, মানুষ ও প্রাণীদের রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর) আওতায় ১৫টি জেলায় লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানোর কথা বলা হয়। এ লক্ষ্যে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দও দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মসূচির আওতায় ১৩৫ উপজেলায় মোট ৩৩৫টি বজ্র নিরোধক দণ্ড ও বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। পরে দেখা যায়, এসব জায়গায় আসলে যন্ত্র বসেনি। লুটপাট হয়েছে অর্থ। এ নিয়ে এখন চিঠি চালাচালি আর তদন্ত করছে মন্ত্রণালয়।

 

 

এত প্রকল্পের ভিড়ে সম্প্রতি বজ্রপাত ঠেকাতে আরও একটি উদ্যোগ নেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের আওতায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সহযোগিতায় বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে ‘হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার অ্যাসেসমেন্ট’ নামে একটি প্রযুক্তি চালু করে। এর মাধ্যমে ৫৪ ঘণ্টা আগেই বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়ার কথা।

 

 

চলতি বছরেই স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভালনারিবিলিটি রিডাকশন (রিভার)’ শীর্ষক প্রকল্প পাস হয়েছে। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১৪ জেলায় বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪০০টি বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা হবে। যদিও বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপনে আগেও প্রকল্প ছিল; কিন্তু সেই প্রকল্পের ইতিহাস সুখকর নয়। অভিযোগ উঠেছিল নানা নয়-ছয়ের।

 

 

আবহাওয়া অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বজ্রপাত ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ও। এ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘হাওরাঞ্চলে কৃষকদের জীবনের সুরক্ষায় বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩১ কোটি টাকা। এর আওতায় হাওরাঞ্চলের সাত জেলার ১৬টি আর্লি স্টিমার ইমিটার (ইএসই) নামে বজ্র নিরোধক যন্ত্র বসানোর কথা রয়েছে। যার ব্যাসার্ধ হবে ১০০ থেকে ১২০ বর্গমিটার। পাশাপাশি ‘আর্থ নেটওয়ার্কস লাইটিং অ্যান্ড সিভিয়ার ওয়েদার আর্লি ওয়ার্নিং সল্যুশন’-এর মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ, ভয়েস ও খুদেবার্তার আকারে স্থানীয়দের সতর্কবার্তা দেওয়া হবে।

 

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আরেকটি বৃহৎ প্রকল্প এখনো পরিকল্পনাধীন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। দেশের বজ্রপাতপ্রবণ ১৫ জেলাব্যাপী এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় বসানো হবে বজ্র নিরোধক যন্ত্র, ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে মানুষের মোবাইল ফোনে সতর্ক করে মেসেজ পাঠানো এ প্রকল্পে ৬ হাজার ৭৯৩টি বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ খাতে ৬৬৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া থাকবে এক ডেসিমেল জায়গায় কংক্রিটের আশ্রয়কেন্দ্র। ১ হাজার ৬৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে খরচ হবে ১৬৭ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা।

 

 

২০১৬ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে বজ্রপাতে মৃত্যু হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবার সর্বনিম্ন ৭ হাজার ৫০০ এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন। আহত ব্যক্তিরা পাচ্ছেন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বজ্রপাতে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ২২৬ জন, ২০১৬ সালে ৩৯১ জন মারা যান। এ ছাড়া ২০১৭ সালে ৩০৭ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৫৮ জন, ২০২০ সালে ২৫৫ জন, ২০২১ সালে ৩৬৩ জন ও ২০২২ সালে ৩৩৭ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। চলতি বছর জুন মাস পর্যন্ত মারা গেছেন দুই শতাধিক।

 

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক কালবেলাকে বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাজ সঠিক সময়ে সঠিক পূর্বাভাস প্রদান করা। পূর্বাভাসটি সঠিক সময়ে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে। মৃত্যু ঠেকানোর জন্য সবচেয়ে জরুরি জনগণকে সচেতন করা। সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা বজ্রমেঘ থাকে, এটি দেখলে মানুষের করণীয় কী, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ বলেন, সবার আগে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। আগাম ও সঠিক পূর্বাভাসের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। পূর্বাভাস প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। বজ্রপাতে তিন ধাপে সতর্কতা দিতে হয়। বজ্রপাতের ৩০ মিনিট আগে, বজ্রপাতের সময় ও ৩০ মিনিট পরে করণীয় কী—এ বিষয়গুলো মানুষকে সচেতন করা গেলে মৃত্যুহার অনেক কমে আসবে।

 

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে, যা আগের তুলনায় বাড়ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও আশপাশের দেশেও বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের লাইটেনিং খুব বেশি সংখ্যক নয়, এরিয়া খুব বড় না। আবার বজ্রপাত খোলা জায়গা, হাওরে এবং নদীতে পড়ে। এটা আইডেন্টিফাই করা হচ্ছে যে, কোন কোন এরিয়াতে বেশি হচ্ছে। সেখানে আগামীতে কিছু লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসানো হবে। আর যারা ভবন মালিক তারা যদি বসায়, তাহলে ভবনে তারা নিরাপদ থাকবে। সরকার তো আর সব জায়গাতে বসিয়ে দিতে পারবে না। তবে কমন স্পেসে যেগুলো বসানো হয়েছে তার সংখ্যাও কম নয়। তিনি বলেন, এ বছর নতুন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে সবকিছুই ইমপোর্টেট আইটেম। ডলার লাগবে। এই মেশিনগুলো বাংলাদেশে তৈরি হয় না।

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল কালবেলাকে বলেন, বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এসব প্রকল্প নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যারা কাজ করেন, বা যাদের উচ্চতর গবেষণা আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। সম্ভাব্যতাও যাচাই করে করা হয়নি। আবহাওয়া অফিস বা যারা প্রকল্প নিচ্ছেন, তাদেরও বিশেষজ্ঞ আছে, তারা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করেন। যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এবং অন্যান্য পর্যায়ে কাজ করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যদি করা হতো, তাহলে স্বচ্ছতা ও সুবিধা আরও বেশি পাওয়া যেত।

 

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ কক্সবাজার সমাচার
Site Customized By NewsTech.Com
error: Content is protected !!