অনলাইন ডেস্ক :
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মাহমুদুর রহমানের আত্মসমর্পণকে কেন্দ্র করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) প্রাঙ্গণ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীসহ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে সিএমএম আদালত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আদালতের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেখানে প্রায় ১৫ জনের মতো সেনাসদস্য প্রাথমিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছিলেন। তাদের পেছনেই ছিল প্রাধান ফটক। ফটকের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। খোলা ছিল শুধু পকেট গেট। এই গেটেও অবস্থান নিয়েছিল সেনাসদস্যরা। তারা আদালত এলাকায় যারা প্রবেশ করতে চেয়েছেন তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে পরিচয়পত্র দেখছিলেন। ওই সময়টাতে শুধুমাত্র সাংবাদিক ও আইনজীবীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল। এরপর আদালত ভবনের গেটের সামনেও অবস্থান নিয়েছিলেন ১০ জনের বেশি সেনা সদস্য। কয়েকজন পুলিশ সদস্যও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার জনসন রোড দিয়ে অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে আদালতের দিকে হেঁটে আসতে দেখা যায় মাহমুদুর রহমানকে। এ সময় তার অনুসারীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে তোলেন আদালত এলাকা।
শুরুতে মাহমুদুর রহমান এসেছিলেন একটি প্রাইভেটকারে। আর তার অনুসারীরা এসেছিলেন দুটি পিকআপে। পরে তারা একসঙ্গে মিছিল নিয়ে আদালত এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যরা এতে বাধা দেন। এ সময় অনুসারীদের সঙ্গে সামান্য ধাক্কাধাক্কিও হয়। পরে অনুসারীদের নিয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের গেট দিয়ে প্রবেশ করেন মাহমুদুর রহমান। পরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের চার তলার সংযোগ সড়ক দিয়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালতে প্রবেশ করে বেলা পৌনে ১১টার দিকে আদালতে আত্নসমর্পণ করেন। এর আগে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই আত্মসমর্পণ করেছেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন মাহমুদুর রহমান।
আদালতে মাহমুদুর রহমানের পক্ষে বিএনপি-জামায়াতপন্থি বেশ কয়েকজন আইনজীবী নেতা শুনানি করেন। তারা আদালতকে জানান, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে করা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
মাহমুদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট থেকে পড়াশোনা করেছেন। একসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন, বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আদালতে জামিন নেবেন না।
গত শুক্রবার দেশে ফিরে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই তিনি রবিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এসেছেন। এ সময় তাকে কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি। জনাকীর্ণ আদালত কক্ষে আসামির ডকে দাঁড়িয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেইসঙ্গে কারাবিধি অনুযায়ী তাকে ডিভিশন দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।
সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে মাহমুদুর রহমানকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। দণ্ডিত অপর তিন আসামি হলেন জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভুঁইয়া।
আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিল আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরো একমাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।
মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন।
ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
Leave a Reply