আগামীকাল জাতিসংঘ দিবস। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে জাতিসংঘ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত এই সংস্থার কার্যক্রম কালের পরিক্রমায় অনেক বেড়েছে।
৫১টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে ১৯৪৫ সালে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩। বিশ্বে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব নিরসনে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এ সংস্থাটি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করে বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের আবেদন চীনের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে যায়। পরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সদস্যপদ লাভ করে। ওই বছরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো বাংলায় জাতিসংঘে বক্তব্য রাখেন।
প্রথম থেকেই বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার সমর্থক বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং করছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অবদান রাখছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
একই সঙ্গে সংস্থাটির বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে যেমন সমালোচনা রয়েছে তেমনি অনেক কাজ করতে সফল হয়নি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে সমালোচনা ও অসফলতা থাকলেও বর্তমান সময়ে জাতিসংঘের কোনো বিকল্প নেই।
জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি নানা কর্মসূচি গ্রহন করেছে।
কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি ও সতীর্থ-৭১ (এসএসসি ১৯৭১ সালের পরীক্ষার্থীদের সংগঠন) যৌথভাবে চট্টগ্রামস্থ নিপ্পন একাডেমির সহযোগিতায় দিবসটি পালন করবে। এ উপলক্ষে আগামীকাল ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার পৌরসভার সভা কক্ষে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র জনাব মাহবুবর রহমান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব জনাব মোহাম্মদ হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার-এর কক্সবাজারস্থ লিঁয়াজো অফিসার জনাব ইফতেখার উদ্দিন বায়েজিদ।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের কয়েক বছর পূর্বে থেকেই চলছিল। ‘লীগ অব নেশনস’ এর ধ্বংসাবশেষের উপরেই গড় উঠেছে জাতিসংঘ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালের ১০ জানুয়ারী স্থায়ী শান্তির প্রহরী হিসেবে ‘লীগ অব নেশনস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
‘লীগ অব নেশনস’ এর ব্যর্থতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বিশ্বের তৎকালীন নেতারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আরেকটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই প্রয়োজনীয়তা ও সংকল্প থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জাতিসংঘের জন্ম প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে উপস্থিত ৫১টি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ সনদটি অনুমোদন করেন। তারই আলোকে ২৪ অক্টোবর অধিকাংশ স্বাক্ষরকারী দেশের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তখন থেকেই প্রতি বছর ২৪ অক্টোবরকে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৪৫ সালে ৫১টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে জাতিসংঘ যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩টি। এর বাইরে আরো দুটি রাষ্ট্রকে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র দুটি হচ্ছে ফিলিস্থিন ও ভ্যাটিকেন সিটি।
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়াসে জাতিসংঘের জন্ম। জাতিসংঘের মূল অঙ্গসমূহ হচ্ছে ১. সাধারণ পরিষদ, ২. নিরাপত্তা পরিষদ, ৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, ৪. অছি পরিষদ, ৫. আন্তর্জাতিক আদালত ও ৬. সচিবালয়।
জাতিসংঘ যে সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে মহান ব্রত হিসেবে গ্রহন করেছে তৎমধ্যে ১. আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা, ২. বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ ও সম্পর্ক গড়ে তোলা, ৩. আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সমস্যার সমাধান করা ও ৪. সকল রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করা মুখ্য।
বর্তমানে জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতিসংঘ বলিষ্ট ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিগ্র দেশসমূহে শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের আভ্যন্তরিন দ্ব›দ্ধ সংঘাত বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সংঘাতময় দেশসমূহের আভ্যন্তরিন শান্তি নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী দলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সিয়েরা লিয়নে বাংলাদেশের ভুমিকা বিশ্বে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীদের ভূমিকাকে আরো গুরুত্ববহ করেছে।
Leave a Reply